প্রকাশিত: Sun, Jan 15, 2023 3:35 PM
আপডেট: Sat, Jun 28, 2025 5:55 PM

কখন বুঝবেন ভুলভাবে রেয়াজ করছেন?

আহসান হাবিব

অনিন্দ্য সাহা নামের একজন ছায়ানটের ছাত্র ফোন করে বললো, স্যার, রেয়াজ করার পর আমার গলা ব্যথা করে, ক্লান্ত লাগে, কী করবো? আমার নিজের প্রথম দিককার রেয়াজের সময়ের কথা মনে পড়লো। রেয়াজের পরই গলা ব্যথা করতো। এর সমাধানটা আমি নিজে করেছিলাম ভয়েসের বিজ্ঞান পড়াশোনা করে। দেখলাম আমার ধ্বনিতত্ত্বের প্রয়োগ ঠিক নেই। প্রতিটি স্বরধ্বনি উচ্চারণে মুখমণ্ডলের একটি নির্দিষ্ট কাঠামো আছে। যেমন- ‘আ’ যা আমরা ‘সা’ বলার সময় উচ্চারণ করি, তা করার সময় যদি ঠোঁট যতটুক ফাঁক করা ঠিক না করে কম বা বেশি করি তাহলে অন্য স্বরযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। এর সঙ্গে চোয়াল যদি মুক্তভাবে নড়াচড়ার বদলে আরোপ করা হয় তাহলেও স্বরযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। এই সুযোগে স্বর উৎপাদনের জন্য নিযুক্ত মাংসপেশির উপর অন্য মাংসপেশি (চিবানো, গেলা, হাসি ইত্যাকার মাংসপেশি) এসে খবরদারি করে। এটাকে আমরা ম্যানিপুলেশন বলি। এই ম্যানিপুলেশনে ভোকাল কর্ড সঠিকভাবে স্পন্দিত হয় না, ধ্বনি বিকৃত হয়ে পড়ে। 

এইভাবে চলতে থাকলে কর্ডের মাংসপেশি ক্লান্ত হয়। শুধু কর্ড নয়, জিহ্বা, চোয়ালও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কর্ডের মাংসপেশির উপর ভুল চাপ প্রয়োগের ফলে সেখানে, প্রদাহ হতে শুরু করে এবং আমরা তখন ব্যথা অনুভব করি। এইভাবে চললে শব্দ উচ্চারণের প্রধান অঙ্গ জিহ্বা ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন আর গান গাইতে বা কথা বলতে ইচ্ছা করে না। রেয়াজের পর যে কণ্ঠ হওয়ার কথা উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত, তা না হয়ে আরও ঝিমিয়ে পড়ে। এই যে রেয়াজের পর গলা ব্যথা, জিহ্বার ক্লান্তি, গান বা কথা বলতে অনাগ্রহ হলেই বুঝবেন আপনার রেয়াজে ভুল হচ্ছে। সঠিকভাবে রেয়াজ করলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা করেও কণ্ঠ ক্লান্তি অনুভব করবে না। এক্ষেত্রে শারীরিক ক্লান্তি ভিন্ন বিষয়। শরীরের বিশ্রাম নিলেই তা দূর হয়। ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত শিল্পীগণের কেউ কেউ দিনে ১৪-১৮ ঘণ্টাও রেয়াজ করেছেন, কণ্ঠের কিছু হয়নি। সঠিক রেয়াজের জন্য আপনাকে কণ্ঠের বিজ্ঞান মানে ধ্বনিতত্ত্ব জানতেই হবে। অনিন্দ্য সাহাকে এটাই বুঝিয়ে বলি এবং দেখিয়ে দিই কীভাবে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে হয়। লেখক: ঔপন্যাসিক